জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে হাসিনা সরকার পতনের পর বর্তমানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে অসংখ্য শিল্পীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস করছেন, আবার কেউ হয়েছেন মবের শিকার। এসব মামলার বেশিরভাগই মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। যা নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিনয় জগতের বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াত।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে অভিনয়শিল্পী সংঘের অভিষেক ও অ্যাক্টর’স ফ্যামিলি ডে-তে অংশ নেন আবুল হায়াত। সেখানেই সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিনেতা।
তিনি বলেন, ‘ইদানিং শিল্পীদের আইনি সমস্যা বেড়েছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। কথা নেই বার্তা নেই, শিল্পীদের হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়, এক হাজার জনের মধ্যে সে নাকি আসামি, মানুষ খুন করেছে।’
গুণী এ অভিনেতা আরও বলেন, ‘প্রমাণ ছাড়াই অভিযুক্ত শিল্পীকে গ্রেপ্তার করে সঙ্গে সঙ্গে জেলখানায় রাখা হচ্ছে। রিমান্ডে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাই আমি মনে করি, আইনি বিষয়ে অভিনয়শিল্পীদের আরও শক্ত হতে হবে। এ জিনিসগুলো নিয়ে আমাদের লিগ্যাল কমিটির কাজ করতে হবে, অনেক করণীয় আছে। কারণ পাবলিক ও সাংবাদিকদের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়।’
আবুল হায়াত যোগ করেন, ‘কোনো শিল্পী যদি অপরাধ করে থাকে সেটা তদন্ত হবে, বিচার হবে, কিন্তু অপরাধ যদি না থাকে, তাহলে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া ন্যক্কারজনক, এটা রীতিমতো অন্যায়। অপরাধ প্রমাণিত হলে বিচার হোক, কিন্তু এই অপমানজনক প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।’
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘যদিও এটা পুরনো কথা, রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। কে কতটা করছেন, এ কারণে দেশের ক্ষতি হচ্ছে কি না, সংগঠনের ক্ষতি হচ্ছে কি না তা জানা জরুরি। এগুলো খতিয়ে দেখতে আমাদের সংগঠন আছে, সরকারেরও দরকার। এই সব ব্যাপারগুলো এখন ওপরে আসছে, সংগঠনকে এ বিষয়গুলো দেখতে হবে।’
আবুল হায়াত বলেন, ‘এই বয়সে এসে আমার গুরুদের স্মরণ করি, সৈয়দ হাসান ইমাম, গোলাম মোস্তফা, সিরাজুল ইসলাম, মাসুদ আলী খান, আবুল খায়ের- এ লোকগুলোকে প্রতিদিন স্মরণ করি। কারণ, তাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি, আড্ডা দিয়ে শিখেছি। একটা দৃশ্য করার আগে খায়ের বা মোস্তফা ভাই বা হাসান ইমাম ভাই বলতেন, ‘এই তুমি এই পাঠ করছ? আমার কাছে আসো, রিহার্সাল দাও’। এখনকার কাউকে বলতে পারব? আমার তো ভয় করে কাউকে বলতে, কী জানি বলে ফেলে। আবার অপমানিতও হতে পারি।’
নতুন অভিনয়শিল্পীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা নতুন আছেন, তাদের উদ্দেশে বলছি, আপনাদের ভেতর জানার আগ্রহ দরকার। যদি মনে করেন, সব জেনে এসেছেন এখানে, তাহলে সেটা ভুল ধারণা। সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজন আছে। সিনিয়ররা যখন মেকাপরুমে থাকেন, তখন তাদের সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করা উচিত, কোন ধরনের কথাবার্তা বলা উচিত। সারাক্ষণ আড্ডা দিতে পারেন, আড্ডা দেন, তা থেকেও শিখতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, ছোট ও বড় পর্দায় নিয়মিত অভিনয় করে চলেছেন ষাট দশকের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত। চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তার অভিনীত সিনেমা ‘দায়মুক্তি’। এতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ৮২ বছর বয়সী প্রবীণ এ অভিনেতা।