শুক্রবার

২১:২৭:৪৯

২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

১১ পৌষ, ১৪৩২

৪ রজব, ১৪৪৭

Edit Content

শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ
  1. Home
  2. Lead
  3. বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন সোমবার

প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান না চালানো সরকারের বড় ব্যর্থতা: মাহমুদুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শেখ হাসিনা জনগণের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, আর কেউ জনগণের অধিকার যেন ছিনিয়ে নিতে না পারে এই বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভারতের মতো আবারও কোনো বিদেশি শক্তিকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সুযোগ দিতে পারি না বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

শনিবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরের টাউন হলের তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে ও ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ এবং জুলাই বিপ্লবোত্তর আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনার ও জাগরণী সংগীত আয়োজন করে আস-সিরাজ নামে সম্মিলিত সামাজিক সংগঠন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশে আমাদের ইসলাম রক্ষা করতে হবে। আমাদের চারপাশে যেসব রাষ্ট্র রয়েছে- একটি ভারত এবং একটি মিয়ানমার। ভারত হিন্দুদের এবং মিয়ানমার বৌদ্ধদের রাষ্ট্র। আমরা একমাত্র মুসলমানদের রাষ্ট্র। আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অব্যাহত লড়াই চালাতে হবে। আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরানো যাবে, কিন্তু ফাটল ধরানোর সব রকম চেষ্টা চলতে থাকবে এটা মনে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে তারা এত সহজে মেনে নেবে না। তারা তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাবে, যাচ্ছে। সেটা গত পাঁচ মাসে আপনারা দেখেছেন। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ কি শুধু তার আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ ছিল, তা নয়। তাকে যারা ফ্যাসিবাদ হতে সহায়তা করেছে তারা কিন্তু বাংলাদেশে এখনও আছে। ফ্যাসিবাদ পালিয়ে গেছে কিন্তু শেখ হাসিনাকে যারা ফ্যাসিবাদী শক্তিতে পরিণত করেছে তারা রয়ে গেছে। তারা এখন আওয়ামী লীগের বদলে অন্য কোনো দলের ওপর সওয়ার হতে চাইবে। কারণ তাদের নিজেদের রক্ষার জন্য এটা করবে। আওয়ামী লীগ ৫৩ বছর ধরে যে বয়ানের কথা বলেছে এই গোষ্ঠী নতুন কোনো দলের ওপর সওয়ার হয়ে একই বয়ান নিয়ে আসবে। বয়ানটা হলো বাংলাদেশকে বিভক্ত ও তথাকথিত স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষে বিভাজন করার বয়ান। এই বয়ানকে রুখে দিতে হবে। এই বয়ান আজকের তরুণ সমাজ রিজেক্ট করে দিয়েছে।

ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ ভারতের একটি ঔপনিবেশে পরিণত হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশকে আবার ভারতের ঔপনিবেশে পরিণত হতে দিতে পারি না। আমাদের এই ঐক্যে যারা ফাটল ধরাতে চাইবে তাদেরই প্রতিহত করতে হবে, সে যে-ই হোক না কেন। সম্মিলিতভাবে আমাদের প্রতিহত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই সরকার একটা বিপ্লবের পর এসেছিল। কিন্তু এই সরকার বুঝতে পারেনি তারা একটি বিপ্লবের প্রোডাক্ট। যে কোনো বিপ্লবের পরে পৃথিবীর সব দেশে একটা শুদ্ধি অভিযান চলে। আমলাতন্ত্র, সেনাবাহিনী, পুলিশ- সব জায়গায় শুদ্ধি অভিযান চলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে একই সরকার গত পাঁচ মাসে শুদ্ধি অভিযান করতে পারেনি বলে এখনও আমরা অরাজকতা দেখতে পাই। আজকে যদি তারা ক্ষমতায় এসে শুদ্ধি অভিযান চালাত তাহলে আমাদের বাংলাদেশ অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকত। অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত না।

ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার হঠাৎ করে সরকার সবকিছুর ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়েছে। ওষুধের ওপরও ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়েছে। রেস্টুরেন্টের ওপর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট করা হয়েছে। সব রেস্টুরেন্ট তো আর বড়লোকের রেস্টুরেন্ট না। গরিব মানুষও তো রেস্টুরেন্টে খায়। সব রেস্টুরেন্টে ভ্যাট বাড়ানো মানে গরিব মানুষের খাবারেরও দাম বাড়িয়ে দিলেন। পোশাকের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়ালেন। কাপড় কিনতে গেলে, ওষুধ কিনতে গেলে মূল্য বৃদ্ধি হবে। এই যে সিদ্ধান্ত সরকার নিল এর মধ্যেই প্রমাণিত হয় এই সরকার বিপ্লবের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি। যদি বিপ্লবের চেতনা পুরোপুরি ধারণ করত তাহলে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব অংশীজনের সঙ্গে তারা আগে আলোচনা করত। ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে বাড়াত। যেখানে গরিবের কষ্ট হবে না সেখানে ভ্যাট বাড়ানো প্রয়োজন ছিল।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ভুলে গেছে কত মানুষের রক্তের বিনিময়ে এই পরিবর্তন ফ্যাসিবাদ ও দানব শেখ হাসিনাকে পতন করাতে পেরেছি। তারা মনে হয় অতিদ্রুত ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছে। উদ্দেশ্য তো এটা হওয়া উচিত ছিল না। উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল আমরা সবাই মিলিতভাবে এমন একটা সিস্টেম করব যেই সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর কোনো ফ্যাসিবাদ কোনোদিন ফিরে আসবে না। তার জন্য সবাইকে মিলে কিছুদিন কাজ করা দরকার ছিল। নির্বাচন যখন হওয়ার তখন হবে, যারা ক্ষমতায় যাওয়ার যাবে। কিন্তু তার আগে তো নিজের প্রয়োজনে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।

ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, এমন একটা সিস্টেম করা যাতে নতুন কোনো শেখ হাসিনার জন্ম হবে না। যে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশের চারদিক ঘিরে আছে সেই সাম্রাজ্যবাদ যেন দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে না পারে তার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার ছিল। কিন্তু সেগুলো নিয়ে ঐক্যমতে না এসে আমরা নির্বাচন নিয়ে অতিরিক্ত আলোচনা শুরু করেছি। বর্তমান সরকার ও রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করব ঐক্যবদ্ধ থাকুন। দেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থ বজায় রাখুন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, বছরের পর বছর ধরে খুনি হাসিনার মাধ্যমে নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছে এ দেশের মানুষ। তার ক্ষমতার পিপাসার কাছে জিম্মি ছিল মানুষ, গোলাপগঞ্জের কাছেও জিম্মি ছিল এ দেশের মানুষ। তাই প্রতিটি মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাসিনা খুনির দোসররা মাদরাসার ছাত্রকে দেখলে টার্গেট করে গুলি করত। তাই ছাত্ররা পাঞ্জাবি-পায়জামা না পরে টি-শার্ট গায়ে দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। শুধু মাদরাসা নয়, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে। যারা হাসিনার দোসরদের ভয়ে আন্দোলনে যেতে পারেনি তারা তাদের স্ত্রী সন্তান এবং স্বজনদের আন্দোলনে যেতে সহযোগিতা করেছে।

তিনি আরও বলেন, খুনি হাসিনা তা তার দোসরদের বিচার প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ এখনও দেশ দোসরমুক্ত হয়নি। দেশের অনেক রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দোসরদের মদদ দিচ্ছে। আমরা সংস্কারের কথা বলি কিন্তু যারা এমন করছে তাদের বিরুদ্ধে কেন কথা বলছি না। তাদের বিরুদ্ধে কথা না বলতে পারলে অভ্যুত্থানের কোনো সফলতা আসবে না। আজকে চাঁদাবাজি হচ্ছে, সিন্ডিকেট হচ্ছে, কারা করছে তাদের কথা কেন বলতে পারছি না। প্রতিটি বাজারে চাঁদাবাজি জন্য পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে সরকারকে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই। খুনি হাসিনা হাজার হাজার পরিবারকে বিগত ১৬ বছরে উৎখাত করেছে। সে একদিনে খুনি হাসিনা হয়নি। যাকে টার্গেট করেছেন তাকেই মেরেছে। আগামীতে কাউকে এমন হতে দেব কি না, তা আমাদের ওপর নির্ভর করবে। খুনি শেখ হাসিনা যা করেছে তার ফলাফল ’২৪-এর অভ্যুত্থান। কেউ যদি ভুল পথে হাঁটেন তাদেরও পরিণতি এমন হবে। আমরা কাউকে ছাড়ব না, তাই বুক টান করে প্রতিবাদ করতে হবে। আমাদের এ লড়াই বাংলাদেশকে সামনে রেখে হোক, মানুষের জন্য হোক।

আস সিরাজ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক মুফতি মুহিববুল্লাহর সভাপতিত্বে এ ছাড়া বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য লুৎফর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফ মাহাদী, ড. আতিক মুজাহিদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে ফজলুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ। এরপর শহীদ ১৫ জন পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনুদানের অর্থ বিতরণ করেন অতিথিরা। পরে জাগরণী সংগীত অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন

Scroll to Top