ফরিদপুর শহরের একটি আবাসিক হোটেলে অভিযানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভূমিকা নিয়ে যখন ব্যাপক আলোচনা চলছে, ঠিক তখনই বর্তমান ডিবি ওসি মিজানুর রহমানের অতীত কর্মজীবন ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ঘিরে একাধিক গুরুতর অভিযোগ সামনে আসছে।
এসব অভিযোগ ফরিদপুরের সচেতন মহল ও বিভিন্ন মহলে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
কর্মজীবনের টাইমলাইন
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মিজানুর রহমান সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানায় ১১ মে ২০১৯ থেকে ০৯ জুন ২০২০ পর্যন্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়েও তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ ছিল বলে স্থানীয়ভাবে আলোচনা রয়েছে।
পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জুলাই আন্দোলনের সময়, ওই থানার আওতায় আন্দোলনরত ছাত্রদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন, গ্রেফতার ও নির্যাতনের ঘটনায় তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল—এমন অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রাজনৈতিক পক্ষপাত ও গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ
অভিযোগে বলা হয়, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ও ওসি হিসেবে বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, আটক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং গ্রেফতার বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের দাবি, এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ মজুদ করেন, যা পরবর্তীতে তার পদায়ন ও বদলিতে প্রভাব বিস্তার করতে ব্যবহৃত হয়েছে।
৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতি ও পদায়ন প্রশ্ন
৫ আগস্ট ২০২৪-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানা থেকে তাকে ডিমোশনাল পোস্টিং হিসেবে সিআইডিতে পাঠানো হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, সেখান থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই আবার প্রভাব ও অর্থের বিনিময়ে ফরিদপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় ডিবি ওসি পদে পদায়ন পান, যা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ফরিদপুরে হোটেল অভিযান ও ডলার লেনদেন বিতর্ক
ফরিদপুরে যোগদানের পরপরই শহরের হোটেল হ্যাভেন্সীতে ডিবি পুলিশের অভিযান এবং সেখানে এক প্রবাসীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ বিদেশি ডলার নিয়ে বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়। অভিযোগ রয়েছে, উদ্ধারকৃত ডলারের একটি অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করা হয়েছে এবং বিনিময়ে আসামিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আইন অনুযায়ী জব্দকৃত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, এ ঘটনায় সে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়।
উঠছে যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
অভিযানে উদ্ধার হওয়া বিদেশি মুদ্রা কি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছিল?
যদি না করা হয়ে থাকে, তাহলে সেই অর্থ কোথায় গেল?
একাধিকবার রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে বারবার দায়িত্ব পাচ্ছেন?
জুলাই আন্দোলনে ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগের কোনো অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়েছে কি না?
তদন্তের দাবি
এ ঘটনায় ফরিদপুরসহ বিভিন্ন মহলে দাবি উঠেছে—পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ যেন নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও উচ্চপর্যায়ের তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগগুলো যাচাই করেন। একই সঙ্গে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বক্তব্য ও নথিপত্র প্রকাশের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
এমএফ/বিকল্পকন্ঠ
#Faridpur #DBPolice #MizanurRahman #Investigation #BangladeshNews