বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক মান ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবছর র্যাংকিং বা সূচক প্রকাশ করে। এসব র্যাংকিংয়ের মানদণ্ডে কিছুটা তারতম্য থাকলেও মূল সূচকগুলো মৌলিকভাবে থাকে একইরকম। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) বিশ্বসেরা টেকসই বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা পেলেও কোনোটিই বিশ্বের সেরা ৬০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে স্থান পায়নি। অর্থাৎ ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের মতো দেশের সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ বৈশ্বিক তালিকার শীর্ষপর্যায়ে স্থান পায়নি। মঙ্গলবার তৃতীয়বারের মতো ‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংস : সাসটেইনেবিলিটি ২০২৫’ শীর্ষক যে র্যাংকিং প্রকাশ করা হয়েছে, এতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবার উপরে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। তাও তালিকার ৬৩৪তম অবস্থানে রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর রয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ৬৯০তম স্থানে রয়েছে। এছাড়া শীর্ষ ১ হাজারে দেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় ১ হাজার ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে করা এ র্যাংকিংয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১০৮০ থেকে ১১০০-এর মধ্যে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১১০১ থেকে ১১২০, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ১১৪১ থেকে ১১৬০-এর মধ্যে। এরপর ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৩০১ থেকে ১৩৫০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৩৫১ থেকে ১৪০০-এর মধ্যে। এছাড়া আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অবস্থান ১৪০১ থেকে ১৪৫০-এর মধ্যে। এ তালিকা দেখলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। কাজেই খুঁজে দেখার দরকার আছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিংয়ে এমন পিছিয়ে থাকার কারণ কী।
বস্তুত র্যাংকিং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচিত করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি মূল্যবান হাতিয়ার হিসাবেও কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পদ্ধতিগত মূল্যায়ন, যেমন উচ্চশিক্ষার গুণগত মান, গবেষণার আউটপুট এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসহ বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে র্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও দুর্বলতাগুলোকে দৃশ্যমান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের শ্রেষ্ঠত্ব বিভিন্ন দেশের শীর্ষ মেধাবী ও প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরাও তাদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি লাভ করে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি করে। কাজেই সামগ্রিকভাবে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ, গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষতা, গবেষণার মান, মানবকল্যাণে অবদান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অধিক গুরুত্ব দেবে, এটাই প্রত্যাশা।